ইউরেথ্রাইটিস: মূত্রনালীর প্রদাহকে ইংরেজিতে ইউরেথ্রাইটিস বলে। গনোরিয়া, আঘাতাদির কারণে এই পীড়া হতে পারে। ঘন ঘন প্রশ্রাবের বেগ, বেদনা, জ্বালা, অনেক সময় প্রশ্রাব ২/৩ ধারায় বের হয়।
ইউরিনারী_ফিস্টুলা: গনোরিয়াজনিত প্রদাহ হতে মূত্রনালীর কোন অংশে ইরিটেশন হয়ে স্ফোটক হয়। সে স্ফোটক ফেটে গিয়ে পূয বের হবার পর ক্ষত শুকায় না, ইহাই ইউরিনারী ফিস্টুলা। বার বার ক্যাথিটার প্রবেশ করানোর জন্যও এই পীড়া হতে পারে। কখনও বেদনা বা প্রদাহ থাকে না, আবার কখনো বেদনা থাকে। প্রশ্রাবের সময় ভীষণ জ্বালা যন্ত্রনা হয়।
ষ্ট্রীকচার: প্রমেহ বা অন্য কোন কারণে মূত্রনালী সংকুচিত হলে তাকে ষ্ট্রীকচার বলে। ইহাতে প্রশ্রাব বন্ধ অসাড়ে প্রশ্রাব , জ্বালা, দুর্গন্ধ প্রশ্রাব, বেদনা,পূয, কখনো অল্প অল্প প্রশ্রাব। আবার সর্বদা প্রশ্রাব ত্যাগের ইচ্ছা, কিন্তু অতি অল্প পরিমান ফোঁটা ফোঁটা প্রশ্রাব। ব্লাডারের প্রদাহ, অণ্ডকোষে বেদনা, জননেন্দ্রিয় চুলকায়, প্রশ্রাবে সুগার, রক্তস্রাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মূত্রনালীর_পক্ষাঘাত: এতে মূত্রনালীর পেশীসমূহের ক্ষমতা আংশিক বা সম্পুর্ন লোপ পায়। কারণ: বৃদ্ধাবস্থা, অল্প বয়সে শরীর ক্ষয়, মূত্রনালীর বিবৃদ্ধি, অতিরিক্ত মৈথুন, হস্থমৈথুন, ঠান্ডা লাগা, মুত্রনালীর প্রদাহ, আঘাত লাগা অর্ব্বুদাদির চাপ ইত্যাদি কারণে এই পীড়া হয়। ইহাতে মূত্রবেগধারনে অক্ষমতা, অনেক সময় প্রশ্রাব থলিতে পুর্ন আছে, কিন্তু অতি অল্প পরিমান প্রশ্রাব হয় কিন্তু মূত্রথলী সম্পুর্ন খালি হয় না। আবার অনেক সময় চোয়ায়ে প্রশ্রাব হয় কিন্তু বেগ দিলে প্রশ্রাব হয় না।
প্রশ্রাব_বন্ধ: মূত্রযন্ত্রের কোন অপারেশন, কলেরায় অতিরিক্ত ভেদবমির দ্বারা রক্তের জলীয় অংশ বের হয়ে গেলে সাপ্লেশন অব ইউরিন বা প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে যায়। মূত্রনালীতে টিউমার অথবা বড় বড় পাথর থাকলে মূত্রথলীতে প্রচুর প্রশ্রাব থাকা সত্যেও প্রশ্রাব বের হতে পারে না , আটকে থাকে। একে রিটেনশন অব ইউরিন বলে। ইহার লক্ষন হলো, পুনঃপুনঃ প্রশ্রাবের বেগ হয়, কিন্তু অনেক চেষ্টা করলেও প্রশ্রাব হয় না। কখনো বা অনেক্ষন বসে থাকার পর ফোঁটা ফোঁটা প্রশ্রাব নির্গত হয়। এতে মূত্রনালীতে বেদনা হয়। মহিলাদেরও এ সমস্যা হতে পারে , জরায়ুতে বেদনা হয়। তলপেট ফুলে যায় , অনেক সময় নিদ্রাবস্থায় অজান্তে প্রশ্রাব হয়ে যায়। অনেকসময় হাচি-কাশিতেও প্রশ্রাব হয়ে যায়।
মূত্রপাথরী: ইংরেজিতে একে ইউরিনারি ক্যালকুলাই বলে। আমরা প্রত্যহ পানাহারের সময় অনেক দুষিত বা অপকারী বস্তু গ্রহন করি, প্রকৃতির নিয়মে এদের অধিকাংশ মূত্রের সাহিত বের হয়ে যায়। কিন্তু সাবধান না হলে অজীর্ণ, উদারাময়, অম্ল, কোষ্ঠবদ্ধ নানা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে হয়। যারা এ সকল পীড়ায় হরহামেশাই আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে অনেকেরই এই পাথরী পীরা হয়।তাদের প্রশ্রাবে অধিক পরিমানে কঠিন পদার্থ নির্গত হয়ে থাকে। এ সমস্ত যা আহার করে তা যথারীতি পরিপাক না হয়ে অধিকাংশ দুষিত পদার্থে পরিনত হয়, এবং পাথরী পীড়াসহ নানাবিধ জটিল পীড়ায় আক্রান্ত হয়। যারা নিয়মিত সময়ে আহার বিশ্রামের সময় পান না তাদের, অম্ল, অজীর্ণ দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে নানাবিধ প্রশ্রাব পীড়ায় আক্রান্ত হয়।
প্রস্ট্যাটাইটিস: ইহা পুরুষের বৃদ্ধ বয়সের একটি জটিল রোগ। প্রস্টেট হলো এক প্রকার গ্রন্থি- দেখতে ঠিক আখরোটের মত। পুরুষের মূত্রথলির নীচে গ্রীবাদেশকে বেষ্টন করে আছে। এই গ্রন্থি হতে এক প্রকার বর্নহীন পিচ্ছিল রস নিঃসরন হয়। কোন কারণে উক্ত প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ হলে প্রশ্রাবে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কারণে এই গ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে যেমন:দীর্ঘদিন শক্ত জিনিসের উপর বসা ,যেমন সাইকেল চালানো, হস্থমৈথুন, মূত্রপাথরী, বাত, গেটেবাত অথবা কোন ঔষধের পার্শপ্রতিক্রয়া ইত্যাদি। লক্ষন : প্রস্টেট প্রদাহিত হলে মূত্রথলীর গ্রীবাদেশে বেদনা অনুভব হয়,গরম হয়ে দপদপানি ব্যাথা হতে পারে। এই ব্যথা কোমর হতে নিচে পর্যন্ত পরিচালিত হয়। রোগীর ক্রমাগত প্রশ্রাবের বেগ হয়। বার বার প্রশ্রাব হয়। অনেক সময় অনেক কোথ ও বেগ দেওয়ার পর অতি ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণ প্রশ্রাব হয় কিংবা একেবারেই হয় না।
ক্রমাগত এরূপ নিষ্ফল চেষ্টার পর ক্রমশ যন্ত্রণার বৃদ্ধি হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত প্রস্রাবের চাপ থাকা সত্বে ও প্রস্রাব পরিষ্কার হয় না। প্রস্রাবের থলিতে থেকে যায়। প্রস্রাবের থলিতে আবদ্ধ থাকার ফলে অতিরিক্ত যন্ত্রণা হয়। ক্রমাগত প্রস্রাবের ত্যাগের ইচ্ছা, অসহ্য যন্ত্রণা, সর্বদা শীত শীত ভাব, জ্বর ইত্যাদি কতক গুলো লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে ইহা পেকেছে।
পুরুষের ৫০ বছরের পর হতে সাধারণত এ রোগ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার আশ্রয় নেয়া হয় যা বিত্তহীন মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণ অনুসারে নির্ধারিত ঔষধে এ রোগ ভাল হয়।
উপরোক্ত যে কোন প্রশ্রাবের পীড়ায় যথাযথ ভাবে রোগী লিপি সাপেক্ষে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করে প্রয়োগ করলে এ রোগ ভাল হয়ে যায়।
এখানে একজন প্রষ্ট্যাটাইটীস রোগীর আরোগ্যের কাহিনী বর্ণনা করা হলো। রোগীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বয়স ৬৬ বছর, বাড়ী ফরিদপুর। তার বর্তমাণ লক্ষণ হলো দিন রাত ঘন ঘন প্রস্রাব করে। প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যাথা করে, জ্বালা করে, চাপ রাখা যায় না। বাম সাইড ব্যাথা করে। টেষ্ট রিপোর্ট দেখা গেল প্রষ্টেট এনলারজড এবং বাম কিডনীতে ১ টি সিস্ট আছে। সাইজ। পায়ে ব্যাথা করে , বাম পা বেশী আগে পা ফুলা ছিল। উঠা-বসা কষ্ট হতো ।
বর্তমানে একটু কম। অতীত রোগের লক্ষণ দেখা গেল দুইবার জন্ডিস হয়েছে, খুজলী, পাঁচড়া হয়েছে। বংশগত রোগ, পিতার উচ্চ রক্তচাপ ছিল, স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে। মায়ের পায়ে ঘা ছিল। ভাইয়ের সারা শরীর কাপে সব সময়, পিপাসা আছে। পাাবাবত ১ দিন পর পর। ঘুম কম , স্বপ্ন তেমন দেখে না। কাচা লবন খাওয়ার অভ্যাস আছে। খাবারের রুচি ভালো। প্রিয় মিষ্টি খাবার, গরম পছন্দ, ঠান্ডা মেজাজ আনন্দের খবরে, ধন্যবাদ দিলে চোখে পানি আসে, অত্যন্ত আবেগ প্রবণ।
আরো পড়ুনঃ মূত্রনালীর প্রদাহ – Urethritis কি ?
উপরোক্ত লক্ষণের ভিত্তিতে রিপাটরী করে তাকে ঔষধ প্রদান করা হলো গত ৩০/১২/১৯ হতে ২৭/০২/২০ পর্যন্ত ৩ বার ঔষধ প্রদান করা
হয়েছে। বর্তমানে আকার চেয়ে অনেক ভাল। দীর্ঘ ৮ মাস পর ২৮/১০/২০ তে নতুন রিপোর্ট সহ চেম্বারে উপস্থিত। রিপোর্ট দেখা গেল প্রষ্টেট স্বাভাবিক এবং অন্যান্য কোন সমস্যা নাই।
ইউরেথ্রালস্ট্রিকচার বা মূত্রনালিসঙ্কীর্ণ Urethral_structure প্রতিকারে হোমিও চিকিৎসা।
⛑️ডাঃ মাসুদ হোসেন (ডি, এইচ,এম, এস)
☎️মোবাইল নাম্বার:01907-583252, 01302-743871
ইউরেথ্র্রাল স্ট্রিকচার হলো মূত্রনালি সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়া। এ সঙ্কীর্ণতা ঘটে আঘাত বা রোগের কারনে যেমন- মূত্রপথের সংক্রমণ বা মূত্রনালির প্রদাহের কারণে। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারের প্রাথমিক স্তরে রোগীর প্রস্রাবের সময় ব্যথা করে এবং প্রস্রাব করার পর মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হয় না। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার প্রস্রাবের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা ঘটাতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব আটকে যায়, তখন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কারণ স্ট্রিকচার মূত্রথলি থেকে পুরুষাঙ্গের মাথা পর্যন্ত যে কোনো স্থানে হতে পারে। স্ট্রিকচারের সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে মূত্রনালিতে আঘাত এবং মূত্রপথের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।
মূত্রনালী সাধারণ কথায় ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারের কারণগুলো:
- মূত্রনালি বা পুরুষাঙ্গে আঘাত।
- আঘাতজনিত পেলভিক ফ্রাকচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত মূত্রনালিতে আঘাত যেমন- মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া, কলকারখানায় আঘাত ইত্যাদি।
- পায়ু এলাকায় সরাসরি আঘাত।
- বারবার প্রস্রাবের পথে সংক্রমণ।
- যৌনবাহিত রোগ।
- লাইচেন সেক্লারোসিস মূত্রনালি ও পুরুষাঙ্গের জন্মগত অস্বাভাবিকতা।
- মূত্রপথের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।
উপসর্গ :
- পায়ু এলাকায় সরাসরি আঘাত যার ফলে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা করা।
- প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কম হওয়া।
- দু’নলে প্রস্রাব হওয়া।
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া।
- পেটে ব্যথা, মূত্রনালি পথে নিঃসরণ।
- অল্প অল্প প্রস্রাব হওয়া।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
- প্রস্রাব হঠাৎ আটকে যাওয়া কিংবা দীর্ঘমেয়াদি আটকে যাওয়া।
- পেছন দিকে চাপের কারণে কিডনি বড় হওয়া।
জটিলতা : ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসা না করালে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
যেমন :
- প্রস্রাব আটকে যাওয়া।
- মূত্রনালিতে আরেকটি পথ তৈরি হওয়া।
- মূত্রনালিতে পুঁজ হওয়া।
- মূত্রনালিতে ফিস্টুলা হওয়া।
- কিডনি বড় হওয়া।
- প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়া।
- প্রস্রাবের পথে পাথর হওয়া এবং চাপ দেওয়ার কারণে হার্নিয়া।
- হেমোরয়েড হওয়া কিংবা মলনালি বেরিয়ে আসা।
মূত্রনালি রোগের চিকিৎসা না করালে মূত্রনালি সরু হওয়া বা মূত্রনালিতে ক্যানসার। মূত্রনালি ও পুরুষাঙ্গে জন্মগত অস্বাভাবিকতার জন্য পুনর্গঠন চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে মূত্রনালিতে টান পড়ার কারণে মূত্রথলির মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন_ প্রস্রাব আটকে যাওয়া (প্রস্রাব করতে অক্ষমতা), প্রস্রাব ঝরতে থাকা, প্রস্রাবের পথে প্রদাহ বা সংক্রমণ,প্রস্রাব কিডনিতে ফিরে আসা এবং কিডনির কার্যকারিতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক_চিকিৎসা :
Clematis : মূত্রনালির সরু হইয়া আংশিক ভাবে মূত্র নিগর্গমন। তখন ইহা প্রযোজ্য।
Canthris: সরু পথে মূত্র ত্যাগের পাশাপাশি ভীষণ জ্বালা যন্ত্রণা হয়।
Ars alb : মূত্রের পরিমাণ সামান্য জ্বালাকর প্রস্রাব।
Belladonna : মূত্র অবরোধ, তরুন মূত্রযন্ত্রের রোগ।
মূত্র অল্প এবং কুন্থনযু্ক্ত প্রস্রাব।
Stigmata : মূত্র রোধ, মূত্র নাশ,মূত্র কষ্ট, মূত্র পাথরি, কিডনীতে বেদনায় প্রযোজ্য।
Chimaphila : মূত্রে দড়ির ন্যয় পূঁজ ও প্রস্রাবে তলানি পড়ে,প্রষ্টেট গ্রন্থির স্ফীতি, মূত্রের বেগ ধারন করতে পারে না।
এছাড়া :
- 🧪টেরিবিন্থিনা
- 🧪মর্ফিনাম
- 🧪প্লাম্বামমেট
- 🧪থিওসিনামিন
- 🧪ক্যাম্ফর
- 🧪থুজা
- 🧪কোনিয়াম
ইত্যাদি লক্ষণ অনুসারে প্রযোজ্য।
Dr. Masud Hossain ☎️ 01907-583252 , 01302-743871
রোগী দেখার সময়ঃ
🛑সকাল ০৯.০০_ ০১.০০ টা।
🛑বিকাল ০৫.০০_ রাত ১০.০০ টা পর্যন্ত।
অন্য লেখা পেড়তে ক্লিক করুন