ফ্যাটি লিভার

ফ্যাটি লিভার – কারণ, লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

ফ্যাটি লিভার – কারণ, লক্ষণ এবং কার্যকর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

🛑ফ্যাটি লিভার লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়াকে ফ্যাটি লিভার ডিজিস (Fatty Liver Disease) বলে। অনেকেই ভাবেন কেবলমাত্র মদ্যপান করলেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু মদ্যপান না করলেও এটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। মূলত অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, অনিয়মিত লাইফস্টাইলের কারণে এটির সমস্যা দেখা দেয়। দেখে নিন কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার এটির সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

🛑ফ্যাটি_লিভারের সমস্যা কাদের বেশি হয়:- সাধারণত মাঝবয়সী ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। যদিও শিশুদের ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে সাধারণত মাঝবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম করেই এটির রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে সবাইকে আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যে তার এটি আছে কি না- এ রকম কোনো প্রস্তাবনা নেই। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা স্থূলকায় বা যাদের রক্তে চর্বি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা দরকার। এই সংক্রান্ত আলোচনা এই আর্টিকেলের নিচের দিকে করা হয়েছে।

🛑ফ্যাটি লিভার এর উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ:

এটি হওয়ার প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। তবুও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনটি মৌলিক বিষয়কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

🛑ক. মেটাবলিক সিনড্রমস :

  • Malaise বা মাদকদ্রব্য যা মানব দেহের স্বাভাবিক মেটাবলিক ক্যাপাসিটি দূর্বল করে ভারসাম্যহীন করে তোলে।
  • ডায়াবেটিস, হাইব্লাড প্রেসার বা হাইপার টেনসন,
  • হাই ব্লাড কোলেস্টরেল অর্থাৎ রক্তে কোলেস্টরেল বৃদ্ধি পাওয়া, প্রেগনেনসি বা গর্ভধারণকালীন একিউট ফ্যাটি লিভার
  • গ্লাইকোজেন সংরক্ষণ সমস্যা:
  • কনজেনিট্যাল ডিজঅর্ডার (জন্মগত ব্যাধি)
  • ইনফেক্‌সনস্‌ (টিউবারকিউলোসিস এবং ম্যালেরিয়া)
  • বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য ও ঔষধ।
ফ্যাটি লিভার

🛑খ. পুষ্টিজনিত কারণ :
অত্যন্ত অপুষ্টি অর্থাৎ পুষ্টিজনিত ভারসাম্যহীনতা
স্থূলতা (অত্যধিক মোটা হওয়া), হঠাৎ দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, স্থুলতা কমানোর জন্য সার্জারী।

🛑গ. কনভেনসনাল ড্রাগস বা ঔষধ সেবনজনিত কারণ :
করটিকোস্‌টিরয়েড ভেলপ্রোয়িক এসিড (এপিলেপটিক বা মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়)
হাইপার টেনসন কিংবা অনিয়মিত হার্ট বিটের জন্য মেডিকেসন সিডেটিভ বা বেদনানাশক ব্রেস্ট ক্যানসার এর মেডিকেসন মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-এ গ্রহণ।

🛑স্টেজ বা গ্রেড অব ফ্যাটি লিভার :
গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩
গ্রেড-১ ও ২ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা যায়।

🛑ফ্যাটি লিভার এর ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ:
🧪শরীর অধিক মাত্রায় স্থূল হলে।
🧪এলকোহল বা মাদক গ্রহণ করলে।
🧪উচ্চরক্ত চাপ যা ঘন ঘন উঠানামা করে।
🧪 ব্লাড কোলেস্টেরল লেভেল বৃদ্ধি পেলে।

ফ্যাটি লিভার

🛑ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণসমূহ:
Malaise অর্থাৎ খুবই অস্বস্তিকর শারীরিক অবস্থা ফলে রোগী শুধু বিশ্রাম চায়।
Fatique অর্থাৎ শারিরীক ও মানসিক অবসাদ বা দূর্বলতা। উদরের মধ্যে পরিপূর্ণতা এবং ভারী ভাব। বিশেষতঃ ডানদিকে উপরিভাগে অধিক। মাঝে মধ্যে চাপের কারণে লিভারে ব্যথা হতে পারে। যদি এটির যথাযথ চিকিৎসা ও আহার নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় যা হবে জীবনের জন্য খুবই বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ।

🛑লিভার ফেইলিউর এর উপসর্গগুলো নিম্নরূপ :

  • লিভার ফেইলিউর-এর উপসর্গসমূহ (ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়) :
  • স্বাদ বিকৃত হওয়া (মুখে তেতো তেতো ভাব)
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
  • অবসাদ বা উদ্যমহীনতা
  • লিভার স্থানে ভারিবোধ হওয়া
  • অনেক সময় গায়ের রং হলদে ভাব হওয়া (জন্ডিস)
  • প্রস্রাব ডার্ক হলুদ রং ধারণ করা
  • খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • গায়ের চামড়ার নিচে হালকা লালচে রঙের উদ্ভেদ
  • লিভার স্থানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হওয়া।
ফ্যাটি লিভার

🛑ফ্যাটি লিভার হওয়ার কারণে যেসব রোগ হয়

হেপাটাইটিস (Hepatitis) : লিভার প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হয়। যেমন: হেপাটাইটিস ই, ঈ এবং উ। অতিরিক্ত মদ্যপান, ঔষধ সামগ্রী, এলার্জিক রিয়েকশন বা প্রতিক্রিয়া কিংবা স্থুলতা ইত্যাদি।

  • 🛑সিরোসিস (Cirrhosis ) : লিভার দীর্ঘস্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়া অর্থাৎ তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।
  • 🛑লিভার ক্যান্সার (Liver cancer) : সাধারণত সিরোসিস এর শেষ অবস্থা। হেপাটোসেলুলার ক্যারকিনোমা।
  • 🛑লিভার ফেইলিওর (liver failure):লিভার ফেইলউর বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন- ইনফেকসন, জেনেটিক এবং অতিরিক্ত এলাকোহল।
  • 🛑এসাইটস (Ascites ): সিরোসিসের ফলে পেটের মধ্যে লিভার ফ্লুইড নির্গত হয়ে পেট ফুলে যায় এবং ভারী হয়।

🛑ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা:

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশের লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-এমাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই এ কথা বলা যায় না। এটির নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষা হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম, যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এ ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি এটির অধিকাংশ রোগীরই রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে এটি শনাক্ত করার উপযোগী পরীক্ষার নাম হচ্ছে ফাইব্রোস্ক্যান। তবে নিশ্চিত করে এটি নির্ণয়ের পরীক্ষা হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে এটি ডায়াগনসিস করা যায়, তেমনি পাশাপাশি লিভারে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস, ফাইব্রোসিস ও সিরোসিসের উপস্থিতি সম্পর্কেও একমাত্র এই পরীক্ষার মাধ্যমেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।

homeo treatment
homeo treatment

🛑ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করবেন কিভাবে?

এটি প্রতিরোধে পরামর্শসুস্থ থাকতে হলে আমাদের খাদ্যের অভ্যাসকে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। আমরা যে পরিমাণ খাবার খাই, সে অনুযায়ী যদি পরিশ্রম না করি, তাহলে যে বাড়তি কার্বোহাইড্রেটগুলো বা যেই শর্করা খাবারগুলো আমরা গ্রহণ করে থাকি, সেগুলো চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হতে থাকবে। একপর্যায়ে এটি লিভারেও জমা হওয়ার কারণে এটি হতে পারে। একটি হলো খাদ্যের অভ্যাস।

আরেকটি হলো আমাদের জীবনযাপনের মধ্যে যদি আমরা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি, পরিশ্রম- এগুলো কম করি, তাহলেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং এ রকম হতে হবে যে আমরা একটি ব্যায়াম করব। ব্যায়াম করতে না পারলেও অন্তত একটু জোরে জোরে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার থাকতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার এগুলো এড়িয়ে সুষম একটি খাদ্যাভ্যাস করতে হবে। যাদের নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে, সেটিও ত্যাগ করতে হবে।

আমার সব গুলো লেখা পেড়তে ক্লিক করুন

🛑ফ্যাটি লিভার রোগের কার্যকর চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ফ্যাটি লিভার রোগ নিরাময়ের কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। কারণ লিভার রোগ নির্মূলের জন্য যত প্রকার ঔষধ থাকা দরকার একমাত্র হোমিওতেই সেই পর্যাপ্ত পরিমান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং কার্যকর ঔষধ রয়েছে যা অন্য আর কোন চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। কিন্তু এই সমস্যায় আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ট্রিটমেন্ট নিতে হবে। কারণ অনেক সময় আমরা দেখি শধুমাত্র কিছু হোমিও চিকিৎসকের ভুলের কারণেও রোগ ভালো হচ্ছে না। একই রোগ অন্য আরেকজন হোমিও ডাক্তার ঠিকই প্রপার ট্রিটমেন্ট দিয়ে সারিয়ে তুলছেন। তাই দোষটা হোমিওপ্যাথির নয় বরং ডাক্তারের।

তবে একথাও ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রে রোগীদেরও দোষ থাকে – এই যেমন অনেক রোগীই আমাদের কাছে এমন সময় আসেন যখন তার রোগের অবস্থা থাকে একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। এসব ক্ষেত্রে হোমিও ডাক্তারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তবে আপনার উচিত সমস্যার শুরুতেই রেজিস্টার্ড এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেয়া কারণ লিভার সংক্রান্ত সমস্যাগুলি অনেকটাই জটিল প্রকৃতির হয়ে থাকে। শুরুতেই প্রপার ট্রিটমেন্ট না নিলে পরবর্তীতে সাকসেস নিয়ে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

🩺ডাঃ মাসুদ হোসেন ☎️01907-583252 , 01302-743871

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার সমস্যা মন খুলে বলুন।
Send via WhatsApp
error: Content is protected !!