অণ্ডকোষ পুং প্রজননতন্ত্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তা ছাড়া এটা ছেলেদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থান। অথচ এই সংবেদনশীল অঙ্গ দু’টি দেহগহ্বরের বাইরে অবস্থিত। কারণ দেহের ভেতর তাপমাত্রা খুব বেশি। অধিক তাপে শুক্রাণু নিষেকের উপযোগী থাকে না, নষ্ট হয়ে যায়। তাই অণ্ডকোষ দু’টি দেহগহ্বরের বাইরে স্ক্রোটাম বা অণ্ডথলি নামের একটি থলির ভেতর থাকে। এখানে তাপমাত্রা দেহের ভেতরের চেয়ে প্রায় ছয় ডিগ্রি কম। এই তাপমাত্রা শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ইহা থেকে যেমন শুক্রাণু তৈরি হয় তেমনি আহা টেস্টোস্টেরন নামের পুরুষ হরমোনও তৈরি করে। বিভিন্ন কারণে ইহা ফুলে যেতে পারে এবং এতে ব্যথা হতে পারে।
অণ্ডথলিতে অণ্ডকোষ এবং শুক্রাণু পরিবহনের এই বাহিকা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে। এসব অঙ্গ হলো ইহার রক্তবাহিকা, লসিকা গ্রন্থি ও লসিকা নালী, ইহার স্নায়ুতন্ত্র, স্পার্মাটিক কর্ড, কর্ডের চার দিকে ক্রিমেসটেরিক পেশি। অণ্ডথলির ভেতরের যেকোনো অঙ্গই ইহা ফুলে যাওয়ার এবং ইহাতে ব্যথা হওয়ার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু কারণে ইহা ফুলে যেতে (যেমন- ইঙ্গুইনাল হার্নিয়া) ও অণ্ডকোষে ব্যথা (বৃক্কে পাথরের রেফারড্ ব্যথা) হতে পারে; আর এ দু’টি ক্ষেত্রে অণ্ডথলি একেবারেই স্বাভাবিক থাকে।
অণ্ডকোষ দু’টি অনেকটা ডিম্বাকৃতির শক্ত কিন্তু কিছুটা তুলতুলে অঙ্গ। এতে দু’ধরনের কোষ থাকে। লিডিগ কোষ ও জনন কোষ। লিডিগ কোষ থেকে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়। আর জনন কোষ থেকে শুক্রাণু তৈরি হয়। ইহার শেষ প্রান্তে থাকে এপিডিডাইমিস। এই এপিডিডাইমিস ভাস ডিফারেন্স তৈরি করে। ভাস ডিফারেন্স হলো এক ধরনের মাংসল বাহিকা। এটি অণ্ডথলি থেকে বের হয়ে বস্তিদেশের নিচের অংশে ঢুকে যায়। এখানে এই বাহিকা সেমিনাল ভেসিকলের বাহিকার সাথে মিলে একটি সাধারণ বাহিকা তৈরি করে। এই বাহিকাটি প্রোস্টেটের ভেতরে মূত্রনালীর সাথে মেশে।
অণ্ডকোষের টর্সন:
এ রোগটি সাধারণত অল্প বয়সী ছেলে ও যুবাদের রোগ। তবে যেকোনো বয়সের পুরুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে বড়রা এ রোগে আক্রান্ত হন। এটি সাধারণত একটি ইহাই হয়। যদি কোনো ইহার সাথে স্পার্মাটিক কর্ডের খুব সরু সংযোগ থাকে তাহলে এ রোগটি হয়। এ ক্ষেত্রে স্পার্মাটিক কর্ডটি হঠাৎ পেঁচিয়ে যায় ও ঘুরে যায়।
অণ্ডকোষের_টর্সন:
সাথে সাথে অণ্ডকোষটিও ঘুরে যায়। স্পার্মাটিক কর্ডের পেঁচানো অংশটি ইহার রক্তবাহিকা বন্ধ করে দেয়। বেশিক্ষণ এই অবস্থা থাকলে রক্তপ্রবাহের অভাবে ইাহা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দু’টি অণ্ডকোষই এভাবে নষ্ট হয়ে গেলে আক্রান্ত পুরুষ বন্ধ্যা হয়ে যায়। ইহার টর্সন হঠাৎ করেই হয়। তবে কখনো কখনো এটা ব্যায়ামের পর, বিশ্রামের সময় এমনকি ঘুমের মধ্যেও হতে পারে। টর্সন হওয়ার সাথে সাথে রোগীর ইহাতে খুব ব্যথা হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে মৃদু ব্যথাও হতে পারে। এ সময় অনেকের বমি বমি ভাব এবং কারো বা বমি হয়। আক্রান্ত ইহাটি ফুলে যায় এবং একটু ওপর দিকে উঠে যায়। ইহার টর্সন একটি জরুরি অবস্থা, এ রকম অবস্থা হওয়ার সাথে সাথেই রোগীর অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। একটি অণ্ডকোষের টর্সন হলে অপর ইহাটির টর্সন প্রতিরোধী চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। কারণ যার একটি ইহার টর্সন হয়েছে তার অন্য টর্সন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
অণ্ডকোষের প্রদাহ :
এটা এক ধরনের সংক্রমণ। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর অণ্ডকোষে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, সাথে সাথে ইহা ফুলে যায় এবং স্ক্রোটাম লাল হয়ে যায়। রোগীর প্রচণ্ড জ্বর হয়।
অণ্ডকোষের প্রদাহ:
এ রোগে রোগীর রোগ যন্ত্রণা এতই বেশি হয় যে, সে নিজেই যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। বেশির ভাগ রোগীরই সাধারণত মাম্পস, অরকাইটিস হয়। কিন্তু সমস্যা হলো মাম্পস অরকাইটিসের তেমন কোনো ফলদায়ী চিকিৎসা নেই। ফলে এ রোগে ইহার কলাতন্ত্র স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে পুরুষের উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়।
সংক্রমণের জন্য প্রদাহ : এ ধরনের সংক্রমণের মধ্যে এপিডিডাইমিসের প্রদাহ বা এপিডিডাইমাইটিস প্রধান। এই রোগটি ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী পুরুষ যারা যৌন সক্রিয়, তারাই এ রোগে অধিক পরিমাণে আক্রান্ত হয়। তবে যারা যৌন সক্রিয় নয়, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধকে এপিডিডাইমাইটিসের রোগী হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগে প্রথমে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হয়। আস্তে আস্তে এ জীবাণু প্রোস্টেটে সংক্রমিত হয় এবং প্রোস্টেট থেকে এ রোগের জীবাণু এপিডিডাইমিসে সংক্রমণ করে। এ রোগে প্রথমে অল্প ব্যথা অনুভূত হয় এবং এক থেকে দু’দিনের মধ্যে ব্যথা বেড়ে যায়। সাথে সাথে রোগীর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, অনেক সময় লিঙ্গপথে পুঁজ নির্গত হয়। এসব রোগীর অল্পমাত্রায় জ্বর থাকে। তবে কারো ক্ষেত্রে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো জ্বরও হতে পারে। যদি শুরুতেই এ রোগের চিকিৎসা না করানো হয় তবে এ রোগের কারণে পুরো ইহা ফুলে যেতে পারে।
হাইড্রোসিল:
এ রোগে অণ্ডকোষে ব্যথা হয় না। কিন্তু ইহা ফুলে যায়। এ রোগ খুব ধীরে ধীরে হয় এবং ইাহর ফোলা চোখে পড়তে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগে। হাইড্রোসিল রোগে ইাহর টিউনিকা ভ্যাজাইনালিস ও টিউনিকা অ্যালবুজিনিয়া নামের আবরণী দু’টির মাঝে তরল পদার্থ সঞ্চিত হয়।
হাইড্রোসিল:
তবে এ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষটি স্বাভাবিক থাকে। এ রোগের শুরুতে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও যখন হাইড্রোসিলের আকৃতি বেড়ে যায় তখন রোগী এ রোগে খুব অস্বস্তি অনুভব করে।
স্পার্মাটোসিল:
এ রোগেও কোনো ব্যথা থাকে না। তবে এতে ইাহর ওপরের অংশ ফুলে যায়। আসলে স্পার্মাটোসিল হলো এপিডিডাইমিসে তরলপূর্ণ এক ধরনের সিস্ট। এটি ব্যথাহীন এবং মসৃণ। এ রোগের চিকিৎসা না করালেও তেমন কোনো ক্ষতি নেই।
ভেরিকেসিল: এ রোগে স্পার্মাটিক কর্ডের শিরাগুলো ফুলে যায়। এই ফোলা শিরার মধ্যে রক্ত থাকে। শতকরা প্রায় ১৫ জন পুরুষের এ রোগ দেখতে পাওয়া যায়। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগে বাম অণ্ডকোষটি আক্রান্ত হয়।
ভেরিকেসিল:
এ রোগে অণ্ডকোষ ফুলে যায় এবং স্ক্রোটাম কিছুটা নীলচে রঙ ধারণ করে। দাঁড়ালে ইাহর ফোলা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। এ রোগটি তেমন ক্ষতিকারক নয়। তবে এসব রোগীর বন্ধ্যত্ব থাকতে পারে। শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়।
অণ্ডকোষে আঘাত:
যেহেতু স্ক্রোটাম দেহগহ্বরের বাইরে অবস্থিত তাই এতে সহজেই আঘাত লাগতে পারে। স্ক্রোটামে সামান্য আঘাত লাগলেই খুব বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ব্যথা যদি অল্প সময়ের মধ্যে না কমে এবং স্ক্রোটাম ফুলে যেতে থাকে তাহলে এটা সত্যিকারের চিন্তার বিষয়। কারণ এ ধরনের আঘাতের ফলে ইহার রক্তপাত হওয়া এবং ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
অণ্ডকোষের ক্যান্সার:
অনেক রোগীই ইহা ফুলে যাওয়াকে ইহার ক্যান্সার মনে করেন এবং এ জন্য অহেতুক ভয় পান। আসলে কিন্তু খুবই কম মানুষেরই এ রোগ হয়। অণ্ডকোষের ক্যান্সার সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের হয়ে থাকে। এ রোগের কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে যাদের জন্মের সময় অণ্ডকোষ অণ্ডথলির বাইরে থাকে (যেমন- ইঙ্গুইনাল ক্যানেল, উদর গহ্বর ইত্যাদি) তাদের ইাহর ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ পুরুষের চেয়ে ১১ গুণ বেশি।
অণ্ডকোষের ক্যান্সার:
অণ্ডকোষের ক্যান্সারে যেকোনো একটি অণ্ডকোষে একটি শক্ত গোটা হয়। তবে কিছু কিছু ক্যান্সারে সমস্ত ইহা বড় হয়ে ফুলে ওঠে এবং এটা কিছুটা তুলতুলে অথচ শক্ত হয়। সাধারণত এ রোগে ইহাতে কোনো ব্যথা হয় না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ইহাতে হালকা ব্যথার ভাব হতে পারে এবং অণ্ডকোষটি খুব ভারী মনে হতে পারে। যদিও ক্যান্সারের নাম শুনলেই মনে খুব ভয় হয়, আসলে শুরুতেই রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সারানো সম্ভব। এ জন্য প্রত্যেক সচেতন পুরুষের ৪০ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত একবার নিজের অণ্ডকোষ অনুভব করে দেখা উচিত যে, এতে কোনো ব্যথাহীন গোটা হয়েছে কি না।
আরো পড়ুনঃ নারী ও পুরুষের যৌন অনীহার হোমিও চিকিৎসা:
হার্নিয়া:
ভ্রণাবস্থায় মানুষের অণ্ডকোষ পেটের ভেতর থাকে। জন্মের সময় ইহাটি পেট থেকে ইঙ্গুইনাল ক্যানেলের ভেতর দিয়ে স্ক্রোটামে চলে আসে। বিভিন্ন ধরনের কলা দিয়ে এই ক্যানেল বা পথটি তখন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি এ রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ না হয় তাহলে এ রাস্তা দিয়ে পেটের নাড়িভুঁড়িও অণ্ডথলিতে চলে আসতে পারে। একেই হার্নিয়া বলে।
এতে স্ক্রোটাম ফোলা দেখায়। বেশির ভাগ হার্নিয়াতেই কোনো রকমের ব্যথা হয় না এবং পেটের নাড়িভুঁড়ি সহজেই পেটে ঢুকানো যায়। তবে ইনকারসেরেটেড হার্নিয়া পুনরায় পেটে ঢুকানো যায় না। আবার যে হার্নিয়ায় পেটের নাড়িভুঁড়িতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় তাকে স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া (strangulated hernia) বলে। অন্যান্য হার্নিয়া অণ্ডকোষের কোনো ক্ষতি করে না। তবে অনেক দিন হার্নিয়া থাকলে তা থেকে ইনকারসেরেটেড এবং স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া হয় এবং এই দু’ধরনের হার্নিয়ারই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করাতে হয়।
মারাত্মক_ইডিমা: সাধারণত অণ্ডথলির বিভিন্ন ধরনের রোগেই অণ্ডথলি ফুলে যায়। তবে কিছু কিছু মানুষের হৃৎবিকলতা, যকৃতের রোগ, বৃক্কের রোগ বা অন্যান্য কিছু বিশেষ রোগে শরীরে পানি আসে এবং শরীর অতিমাত্রায় ফুলে যায়। এই পানি পা, পেট প্রভৃতিতে জমা হওয়ার সাথে সাথে লিঙ্গ এবং অণ্ডথলিতেও জমা হয় এবং অণ্ডথলি ফুলে যায়।
আবার অণ্ডকোষের লসিকা গ্রন্থি এবং লসিকা বাহিকা বন্ধ হয়ে গিয়েও অণ্ডথলি ফুলে যায়। এ ক্ষেত্রে অণ্ডথলিটি খুব শক্ত থাকে। এ রোগকে অণ্ডথলির গোদরোগ বলে। ফাইলেরিয়া নামের এক ধরনের পরজীবী এ রোগ সৃষ্টি করে। তবে আশার কথা হলো, এ রোগ তেমন একটা হয় না বললেই চলে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
ডাঃ মাসুদ হোসেন
01907-583252 , 01302-743871